নাস্তার
টেবিলে
.
নাস্তার
টেবিলে...
উষর দিন
উঁকি দিয়ে গ্যাছে
সাপের
মতো কুণ্ডলী পাকানো
নিথর
পড়ে আছে দু'ঘন্টা আগের তুন্দল।
জারের
পানিতে মনে হলো, কেউ আর
অবশিষ্ট
রাখেনাই হলদে দাঁতের বিকাশ।
চিনিদানা
জমাট বেঁধে ধীরে
কোন মিছরির
পাটাতনে স্বরূপ হারায়...
চুরুটের
দেহ ভরে সুস্থির ফুটে আছে
উত্তুরে
হাওয়ার অবসাদ।
জানালার
পাল্লা মেলে দেখা যায়-
গলির
মোড়ে একটাও প্রজাপতি নেই!
নিদারুণ
শৈত্য মেঙে চিন্তার অনুতাপে ঝরে
কুয়াশাচোখের
মতো রাখাল বালকের
মিথ্যার
নিপুণ ক্ষরণ!
খেতে
প্রবৃত্তি না হলে
রাস্তার
ধারে এক ঝাঁকড়া পাগলের কথা
মনে হয়; তাঁর শতচ্ছিন্ন মোড়কে লেপ্টে আছে
পুরাকাল
বিরক্তি প্রগমনের বিবিধ চিত্রকলা
অথচ
তাঁর কোন আহারবোধি মাসোহারা নেই!
..
বিরক্তি
প্রচ্ছন্ন হলে
কোন
চিরসিধা সরল চোখের কথা মনে পড়ে-
আহুত
পদক্ষেপের গ্যাঞ্জামে প্রতিবার-আসা-পথ
চিনতে
ভুল করেছেন বাবা; গুলিস্তানে মানুষের
পাকে
চল্লিশ মিনিটের মত হারিয়ে গেছেন তিনি!
আমি
অস্থির! অথচ দ্যাখলাম-
তাঁর
নিরব চলনভরে কোনরূপ অনুযোগ আদিখ্যেতা নেই!
...
চরণ
চলবে না বলে আজ
ভাজ করা
পড়ে থাকলে অছুটিবারের
নিয়মাদি; মাওয়াঘাটে ভেঁপুসুর ছেড়ে যাওয়া
এমভি
অচিনপুরের কথা মনে হয়-
কোথাও
পৌঁছুবার কথা থাকে আমাদের
শত
নির্জীবতায়ও প্রাণের স্ফুরণ লাগা
সূর্যের
প্রেমময় দ্বারে...
নাস্তার
টেবিলে শেষে এমন নিঃসঙ্গতা আহার করা
হয়-
ফুটে উঠা অনীহার প্রান্তিক শৈত্য ক্রমন।
আমি
ধীরেধীরে...
বাবার
মতো অকরুণ গুটিয়ে যাই
চল্লিশ
আলোকবর্ষ পাষাণ চলার ভিতরে..!
প্রাণমঙ্গল
.
সেও-যে
রোদের দিশা আরো কেউ বেদনা-মানুষ
এ ভুবন
মোহের মজলিসে বসে এ-কথা তোমার
থেকে
আরো কেউ অধিক বলে না।
তুমি
বলেছো- লোভের সর্প যেন অন্তরে ফণা
না-তোলে; যদি ঈর্ষাকে হারাতেই না-জানো
কীসের
অহংকারে মো’লেম ছায়ামূলে জিতে
যেতে
আসো; জীবন-তো ফুলের রক্ষাভারে
ব্যথাজাগরূক
কতো-যে মহান দৃঢ় কাঁটা!
কেউ ফুল
হতে চায়, তুমি তারে দিলেই-বা
পরিচর্যাটুকু-
নিভৃত অশ্রুর ফোঁটাখানি আত্মানুদান।
একদিন
মানুষের পুরে আপনিই খুলে যাবে
বৈপরীত্যের
সমমান- একেকটা গাল্পিক আঁধার
কতোটা
প্রেমিত ছিল আলোকোদ্ভাসনের মগ্নচৈতন্যসারে।
কেউ
না-জানুক; কেউ না-জানুক-
জানাবার
ব্যাকরণে ভালবাসা কোনদিন
বিবেকের
হাওয়াতম ঝরোখা গাহে না। যদি
ছড়াতে
না-পারো এ-পথ ধূলি-বালুকার সঞ্চয়
আপনারে, তবে কোন তিয়াসায় বলো সূর্যের
অধিক
তেতে উঠো; কোন বিস্মরণে ফের
জোয়ারের
সাথে গরিমার ঠুনকো বাঁধ যাও ভেসে!
বলো
তুমি স্বাভাবিক সত্য বলেই আমাদের আরো
কোন- ভাড়া
করা মিথ্যার মোহন অসুখ লাগে না।
এ-জীবন
যা পেয়েছি তা'রে হাসির বিভাসে
ভাসাবার
হোক-না অলোক উচ্ছ্বাস- সমুন্নত
নমনের
সুপ্তধারা- গীতশ্রী ঝর্ণাসংবহন।
আমি
বলি- তোমার সাদা অনুভব মনশ্চক্ষে
ভাসে-
দুনিয়া শান্তির শুভ্র কবুতরও সুন্দর এমন;
মনে পড়ে
যায়- আবার জনমে আমি ভুল করে
অস্থির
উড়াল যদি ভুলি, জীবন চারণসমেত
তুমিই
হবে তার সহমর্মী সকল থিরতা- কোন
তিতিরের
মতো উড়াল থাকতেও কখনোকখনো,
না-উড়িবার
ঔদাস্যে প্রজ্ঞাদীপ্ত ডানা।
রিক্তহস্ত
গুরুদক্ষিণা
.
তাহারে
বুঝায়া বল যে-কথা সে বুঝতে না চায়-
বল যে, আমরা জানার অধিক ভাণ করি; খালি
খালি
আন্ধারে ঢিল ছুঁড়ি। আর আমরা নুড়ির
আদলে
আসলে আবেদনহীন অমসৃণ ইটের চাক্কা।
আমরা
অহেতুক মুখোশে প্রচেতার সাজ ধরি;
হৃদয়ের
নকশিকাঁথা ছেড়ে মগজের কম্বল নাড়ি
যত কথা
কই মোটাদাগে অপরিণামদর্শীতা।
তাহারে
বুঝায়া বল, কেন সে এখনো মানে না-
যা-কিছু
নিত্যানন্দ মৌলে তা'র বিস্তারিত প্রথম
কাঁন্না।
যতো ঠোঁটস্থ রুখ- তা'র অধিবৃত্ত দায়হীন
যথার
তথা- অসংযমে মাছি ভনভন।
এখানে
বলে রাখ যে, সত্য মেকআপহীন
সত্যের
স্ফুটনে এতো ফেনার ঠিকুজি লাগে না।
তাহারে
জানায়া দাও- মানুষ বিনয়সুন্দর কারণ
মানুষই
অহমিকার খাতিরে মাপজোকহীন
আহাম্মক; মানুষ প্রাকৃতিক, মানুষই সর্বাগ্রে
অতি
কৃত্রিম ভাবসাব শিখেছে বলে!
তাহারে
বুঝায়ে বল- অন্তত ভাবসাবের ব্যাপারে
সে
নিজেও সচেতন। (হাহা!)
সহজের
ওঙ্কার
.
তারপরও
ভোরের দিকে দেখি
যত দেখি
আর্ত রক্তের টকটকে লালে আঁকা
এইসব
ঐতিহাসিক জড়িমা।
কথা
ছিল- মানুষই হবে সকল সুরের আলোকামী।
কেনো
হেরে যেতে হবে
এই
ভাবান্তরে মেলে ধরি নিরন্তরতার এক্ষণ-
আমাজানে
ডুবে গেলে দেখি- কোথাও সত্যের
মতো
নিভৃতচারী চিলতে চিলতে আলোহাসি।
ভয়
নেই...
তোমাদের
কুৎসিত আগ্রাসনে
যুতসই
মেলে দিতে পারি, আজ ছুঁড়ে দিতে পারি-
অন্ধকার
গলিয়ে আসা তির্যক আলোর ত্রিশূল।
দিনকে
দিন জেনে রেখো-
বোধের
বাগানে ফুটে আসে পৃথিবীর সহজ প্রাণন
আমাদের
সন্দর্ভে আজ প্রতিটি সৃষ্টিই
প্রতিবাদে
জীবন্ত ফাগুন।
মানুষের
জানা ছিল প্রতিরোধে সহাস্য মৃত্যুর
অধিকার; জানা ছিল আচমকা মৃত্যুর মিছিলে
একাকার
উঠে আসে আরো সব নোনার আগুন-
সব
শোষিত- শিকার; সংগত ওঙ্কারে বুদ্ধের ধৈর্য
কী
আনলিক মৃত্তিকায় উজাড় মনের জেসাস!
আমি আজ
আকাশভূক-
সম্মিলিত
মোমবাতি শিখা জ্বলেছি,
মৃত্যুর
কৌমার্য দিয়ে আমাকে পারলে ঠেকাও।
নিশির
শিশিরে
.
ব্যথায়
জমেছে মোহ শিশিরের আয়নাকাহিনী
তোমার
ক্লান্তি ধরে সেধেছে যে রাত্রির বানী
তার আছে
প্রতিবিম্ব টলটল আঁখির নহরে
আর আছে
ম্লান হাসি আলোকের স্বৈর শিখরে।
তাঁর
দান সহমর্ম- আঁধারে মাণিক্য নারী
বঞ্চনার
সহমূল্য- কামান্ধ ঘাসের দিশারি।
এতো-যে
বিথর থরে ফুটে থাকে পুণ্যের মতি
তাঁর
এতো প্রিয় কেনো অদূরে ঝরার প্রভাতি
কী
দ্বিধায় সংকোচে মিলায় সে তোমার না-মনে
তা’রে
জিগাও তার এতো মন পোড়ে কেনে!
আমার
বসন দিই- ছায়াছবি সব বারে বারে
তা'রে ভরসা শুধাও- সে যেনো আর না ঝরে।